দেবলীনা তথাগতর জুটি এবার রহস্য ভেদে – Bartaman news – Sin Sister
দেবলীনা তথাগতর জুটি এবার রহস্য ভেদে
আপনার আগামী ছবি ‘সিন সিস্টার’ নাকি একটু অন্য ধরনের?
অন্য ধরনের বলতে গল্পটা থ্রিলারধর্মী আর ভাষাটা বাইলিঙ্গুয়াল। ছবির অর্ধেক সংলাপ ইংরেজিতে। এই যা তফাত। এই ছবিতেও আমার বিপরীতে তথাগতই অভিনয় করছে।
‘সিন সিস্টার’ মানে দুই বোনের কাহিনি তাই তো?
একদম। সেটা তো নামেই স্পষ্ট। যা স্পষ্ট নয় তা হল, এই দুটি বোন যমজ। তাদের স্বভাব থেকে আচার আচরণ, কথাবলার ধরন, ভালোলাগা, রাগ, অভিমান সব একরকম।
অর্থাৎ আইডেন্টিকাল ট্যুইনস …
এখানেই আমার একটু বক্তব্য আছে। সাধারণভাবে ভারতীয় সিনেমায় আমরা যে ধরনের যমজ বোন দেখি তারা সবাই চেহারায় আইডেন্টিকাল হলেও চরিত্রে একেবারে বিপরীতধর্মী। কথা বলা থেকে ব্যক্তিত্ব কোথাও কোনও মিল নেই তাদের। আমি কোনও সিনেমার নাম করতে চাই না, কিন্তু সাধারণভাবে পোর্ট্রেয়োলটা তেমনই হয়। এই চরিত্রায়ণটা ভীষণ অবাস্তব। যমজ বোন কখনওই এতটা আলাদা হতে পারে না। আমরা এই ছবিতে সেই অবাস্তব ব্যাপারটা রাখিনি। আমাদের যমজ বোন আক্ষরিক অর্থেই যমজ। সেই কারণেই আমার এই চরিত্রে অভিনয় করাটাও ভীষণ চ্যালেঞ্জিং মনে হয়েছে।
চ্যালেঞ্জিং কেন?
চ্যালেঞ্জিং হবে না! সামান্য একটু অভিব্যক্তির অদলবদলে দুটো চরিত্রকে আলাদা করতে হচ্ছে। এমন দুটি চরিত্র যাদের বাইরে থেকে দেখলে কোনও তফাতই বোঝা যায় না। সেই চরিত্র যখন দু’রকম ভাবে ফুটিয়ে তুলতে হয় তখন চ্যালেঞ্জ তো স্বাভাবিকভাবেই এসে যায়।
চরিত্র দুটো কীভাবে আলাদা করলেন তাহলে?
মাত্র কয়েকটা অভিব্যক্তি বদলে। এই যেমন চোখের চাউনি, হাত নাড়ার ধরন, উচ্ছাসের ভঙ্গি এইসব একে অপরের থেকে বদলে ফেললাম। ধরুন দুই বোন একই ঘটনায় খুশি হল। কিন্তু সেই খুশির প্রকাশটা তো আর দুটো মানুষের একরকম হতে পারে না, তখন সেই প্রকাশের ধরনটা বদলে দিলাম। এইভাবেই আলাদা হয়ে গেল দুই বোন। তফাতগুলো খুব সূক্ষ্ম। একটু খুঁটিয়ে দেখতে হবে, বুঝতে হবে।
অস্ট্রেলিয়ান রাইটারের গল্প নিয়ে ছবি করার কথা ভাবলেন কেন?
গল্পের টানে। গল্পটাই প্রথম থেকে মুগ্ধ করেছিল। আমি এমনিতেই থ্রিলারের পোকা। রহস্য থাকলে আমার সেই গল্প ভালো লাগে। কিন্তু অনেক রহস্যই পড়তে পড়তে সমাধান হয়ে যায়। খুনি কে তা ধরে ফেলতে পারি। এক্ষেত্রে একদম শেষ পর্যায় গিয়েও তা ধরতে পারিনি। তাছাড়া আমি আর তথাগত এমনিতেও প্রচুর বিদেশি ছবি দেখি। আমার বাড়িতেই একটা মুভি লাইব্রেরি আছে। জেরি হেমারের গল্পটা প্রথম থেকেই অন্য রকম। দুই বোনের গল্প। সেই গল্পের মধ্যেই লুকিয়ে আছে সাসপেন্স। তাদের সংলাপ থেকে ব্যবহার সবেতেই সাসপেন্স পাবেন। দর্শককে বুঝতে হবে কোনটা রহস্যময় আর কোনটা নয়।
‘সিন সিস্টার’-এর গল্পটা একটু ধরিয়ে দিন না পাঠকদের?
সাসপেন্সের আবার গল্প বলা যায় নাকি? এটুকু বলতে পারি সাসপেন্সটা দুই বোনের চরিত্রের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। দুই বোন এক সাহিত্যিকের প্রেমে পড়বে। সেখান থেকেই রহস্য দানা বাঁধতে শুরু করবে। আর একটা কথা, গল্পটা প্রথম থেকেই খুব মন দিয়ে ফলো করতে হবে। গল্প কিন্তু ক্লু ছাড়তে ছাড়তে যাবে। সেগুলোকে সঠিক ধরতে পারাটাই মজা।
রহস্যটা কি প্লটকেন্দ্রিক নাকি…
না, রহস্যটা চরিত্র কেন্দ্রিক। ওই যে একই মানুষের প্রেমে পড়ছে দুটি মেয়ে সেখান থেকেই রহস্যের সূত্রপাত। তবে রহস্যটা দুই বোনকে ঘিরে নাকি নায়ককে ঘিরে সেটা দর্শক দেখে বুঝবেন। এর চেয়ে বেশি আর কিছু বলা যাবে না।
বিদেশি গল্প, বিদেশি পটভূমি, বিদেশি চরিত্র এই সবের সঙ্গে আমাদের দর্শক আইডেন্টিফাই করতে পারবে বলে মনে হয়?
কেন? না পারার কি আছে? আমাদের দর্শক যখন ‘রিয়ার উইন্ডো’ বা ‘সাইকো’র মতো ছবি দেখেন তখন কি তাঁদের আইডেন্টিফাই করতে কোনও অসুবিধে হয়? তা তো হয় না। ফলে দুটো ভিন্নধর্মী জগতও অনেক সময়ই মিশ খায়। তাছাড়া ছবির ভাষাটাই এক্সক্লুসিভ। সব বাধা ভেঙে তা দর্শকের মনকে ছুঁয়ে যায়। কথা প্রসঙ্গে ছবির একটা গুরুত্বপূর্ণ ক্লু দিয়ে দিই।
কী?
ছবিতে একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রূপঙ্কর অভিনয় করছেন। এখানে কিন্তু তিনি অভিনেতা।
শেষ অঙ্ক, পরকিয়া তারপর সিন সিস্টার। তথাগতর সঙ্গে কি একটু এক্সক্লুসিভ জুটি বাধার চেষ্টা করছেন আপনি?
বলতে পারেন। তবে সেই জুটি তৈরি হলেও তা হবে একেবারে অন্যধরনের। কোনও প্যাটার্ন থাকবে না । অর্থাৎ এমন নয় যে আমরা শুধুই রোম্যান্টিক অভিনয় করব বা শুধুই থ্রিলার করব। আমরা কমেডি করব, থ্রিলার করব, রোম্যান্স করব। আরও অন্য যে কোনও ছবিই করতে পারি। কোনও বাঁধাধরা ছক থাকবে না আমাদের ছবি বাছাইয়ে। শুধু গল্পটা স্ট্রং থাকলেই সেই ছবিতে আমাদের পাবেন।
গল্পের উপরেই তাহলে জোর দিচ্ছেন?
গল্প ছাড়া ছবি হয় না। যে কোনও ছবিকে জনপ্রিয় করতে হলে তার মাধ্যমে একটা গল্প বলতে হয়। আর এই কথাটা আমার নয়। সত্যজিৎ রায় বলে গিয়েছেন। তথাগত আর আমি আমাদের প্রোডাকশন হাউসে তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করি।